রত্ন পাথর কিনেছেন অথবা আপনি রত্ন পাথর সম্পর্কে কিছু হলেও খবর রাখেন তাহলে নিশ্চয়ই কোন না কোন ভাবে এ বিষয়ের সাথে আজমির শরীফের নাম শুনতে পেয়েছেন। আমাদের মধ্যে অনেকে রয়েছেন যারা মনে করি আজমির শরীফেই বুঝি রত্ন পাথর পাওয়া যায়। আজমির শরীফের মাজার জেয়ারত করতে গিয়েও অনেকে অনেক পাথর কিনে নিয়ে আসেন কোন এক ধর্মীয় অনুভূতির কারনে। হয়তো কেও কেও মনে করেন এখান থেকে রত্ন পাথর ক্রয় করে ব্যবহার করলে অনেক বেশী উপকার পাওয়া যাবে, কেও আবার মনে করেন এখান থেকে আসল পাথর পাওয়া যাবে।
আমাদের আশে পাশেই অনেক লোককে পাবেন যারা অদ্ভুত পোশাক পরিধান করে অন্যকে বোঝাতে চেষ্টা করেন তিনি আজমির শরীফ যান অথবা তিনি আজমির শরীফের খাদেম এবং তিনি আজমির শরীফ থেকে ফেরার পথে কিছু আসল পাথর নিয়ে এসেছেন। যা আবার বিভিন্ন লোকের কাছে অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করে থাকেন। যদিও এটিকে তারা বিক্রি না বলে ক্রেতাকে যা খুশি হাদিয়া হিসেবে দিতে বলেন। সরল সাধারন মানুষ গুলো প্রায়শই আজমির শরীফের নাম শুনে কি যেন এক ধর্মীয় দুর্বলতার কারনে অদ্ভুত এক বিশ্বাস নিয়ে আজমির শরীফের পাথর কিনেও ফেলেন।
এত এত কথা বলার আসল উদ্দেশ্যটাই বা কি অথবা আসল ঘটনা কি? প্রকৃত পক্ষে আমাদের প্রতিষ্ঠান “Rashi Ratno (রাশিরত্ন)” সব সময় মিথ্যা ও ভণ্ডামির বিপক্ষে। আমরা চাই রত্ন পাথর যারা কিনে ব্যবহার করে থাকেন তারা যেন সঠিক তথ্য জেনে গ্যারান্টি সহ আসল রত্ন পাথর ক্রয় করতে পারেন। কোন প্রকারের ভণ্ডামির শিকার হয়ে যেন নকল অথবা খারাপ কোয়ালিটির পাথর ক্রয় করে কষ্টের টাকা নষ্ট না করেন। তাহলে চলুন এর পেছনে লুকিয়ে থাকা সঠিক তথ্যটুকু যেনে নেই……
ঠিক কত কাল আগে থেকে রত্ন পাথরে সাথে আজমির শরীফের নাম জুড়ে দেওয়া হয়েছে তার হিসেব হয়তো দিতে পারবোনা। তবে আজমির শরীফের পাথর বলে যুগের পর যুগ ধরে মানুষের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে এটা জোর দিয়ে বলতে পারি। বিষয়টা তো আর এমন নয় যে আজমির শরীফের মাজার থেকে গাইবি ভাবে রত্ন পাথর উঠে আসে আর সে গুলোকে মানুষ এনে বিক্রি করে থাকে। আমাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো জানি যে ভারতের রাজস্থান নামক প্রদেশের রাজধানীর নাম “জয়পুর”। এ জয়পুরকে আবার বলা হয় রত্ন নগরী। কারন এখানেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশর খনি থেকে পাওয়া রত্ন পাথর আনা হয় কাটিং ও পলিশ করার জন্য। তারপর সেই কাটিং করা পাথর ছড়িয়ে পরে সারা পৃথিবীতে। যেহেতু এখানে আসল পাথর কাটিং করার ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠেছে, তাই পাশাপাশি এখানেই গড়ে উঠেছে নকল পাথর তৈরি কারখানা। এ জয়পুর থেকে ১০৩ কিঃমিঃ দূরে অবস্থান আজমির শরীফের। আজমির শরীফের খাদেমরা জয়পুর থেকে সব থেকে কম দামি আসল পাথর এবং নকল পাথর কিনে এনে আজমির শরীফে যাওয়া মানুষ গুলোর কাছে ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করে সে পাথর গুলোকে বিক্রি করে থাকেন। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আজমির শরীফ জেয়ারত করতে গিয়ে রত্ন পাথর দেখতে পায় এবং মনের মধ্যে বিশ্বাস জন্ম নেয় যে আজমিরের খাদেম তো আর নকল এবং খারাপ রত্ন পাথর বিক্রি করবে না। এমন সরল বিশ্বাস থেকে অনেকেই রত্ন পাথর ক্রয় করেন। যা ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে সম্পূর্ণ প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই না। এমন কি আমাদের দেশেও অনেকে আছেন যারা আজমির শরীফের খাদেম অথবা আজমির থেকে পাথর এনেছে বলে পাথর বিক্রি করে থাকে। কিন্তু কেও পরিষ্কার করে বলেন না যে রত্ন পাথরের সাথে আজমির শরীফের কোন সম্পর্ক নেই, যা আছে তা হল মিথ্যা। সাধারন মানুষ মনে করনে হয়তো আজমির থেকে কিনলে উপকার বেশী পাওয়া যাবে। এমন কোন তথ্য তো ইসলাম ধর্মেও নেই যে আজমির শরীফের রত্ন পাথর ব্যবহারে মানুষ বেশী উপকার পাবেন।
রত্ন পাথর বা Gemstone মাটির নিচে জমাট বাধা ভিন্ন ভিন্ন ক্যামিকেলের ছোট ছোট টুকরা ছাড়া আর কিছু না। পৃথিবী সৃষ্টির সময় থেকে নানা রকম পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে আগ্নেয়গিরি সহ নানান কিছুর কারনে মাটির নিচের তাপমাত্রা অনেক অনেক বেশী ছিল। সেই তাপের ফলে মাটির নিচে বিভিন্ন ক্যামিকেল বাস্প হয়ে মাটির উপরে বেড় হয়ে আসার পথে যখন কোথাও আটকে যায় তখন তাপের ফলে সৃষ্ট চাপে সেই ক্যামিকেল গুলোই মাটির নিচেই জমাট বেধে যায় আর নানান রকম পাথরের ক্রিস্টাল তৈরি হয়। আর এ জমাট বাধা পাথরের ছোট ছোট ক্রিস্টালকে মাটির নিচ থেকে উত্তোলন করে মেশিনের সাহায্যে কাটিং করে সুন্দর সুন্দর পাথরের রূপ দেওয়া হয়। ক্যামিকেলের ভিন্নতার কারনে এক একটি রাশি রত্ন পাথর এক এক রকম দেখতে হয়ে থাকে। যেমন আমরা সবাই জানি কয়লার খনিতে হীরা পাওয়া যায়। কেন পাওয়া যায় সেটা কি ভেবে দেখেছি? আসলে কয়লার ক্যামিকেল হচ্ছে কার্বন, আর এই কার্বনের এক রূপ হচ্ছে গ্রাফাইট যা আমাদের লেখার পেন্সিলে ব্যবহার করা শিস। হীরাও হচ্ছে কার্বনের আরেক রূপ। ঠিক এভাবে প্রতিটা আলাদা আলাদা রাশি রত্ন পাথরের ক্যামিকেলও আলাদা। আর ভিন্ন ভিন্ন দেশের ভিন্ন ভিন্ন খনি থেকে রত্ন পাথর পাওয়া যায়, ফলে আজমির শরীফে পাওয়া সব পাথর ভারতের খনি থেকে পাওয়ার তো প্রশ্নই আসে না। ফলে কোন পাথরই আজমির শরীফের পাথর হতে পারে। আমাদের সকলের মনে রাখা উচিৎ যে রাশি রত্ন পাথর অলৌকিক ভাবে পাওয়া কোন জিনিস নয় এবং আজমির শরীফ অথবা হজ্ব করতে গিয়ে কিনে এনে অলৌকিক কিছু পাওয়ার নয়।