আমরা যারা রত্ন পাথর সম্পর্কে কিছুটা জানি অথবা যারা একেবারেই কিছু জানিনা তাদের সকলের মধ্যে একটি কথা খুব শুনতে পাওয়া যায়, আর তা হল “নীলা পাথর সবার সয় না”। যদি পরিসংখ্যানের দিকে তাকানো যায় তাহলে দেখা যায় এ দেশের শতকরা ৫ ভাগ মানুষ রত্ন পাথর ব্যবহার করেন। ১০ ভাগ মানুষ রত্ন পাথর দেখেছেন অথবা হালকা পাতলা কিছু ধারণা রাখেন। আর বাকী ৯০ ভাগ মানুষ রত্ন পাথর কি, এগুলো দেখতে কেমন, নাম কি অথবা মূল্য কেমন তার কিছুই জানেন না। কিন্তু শতকরা ১০০ ভাগ মানুষের মুখেই এই একটি কথা শুনতে পাওয়া যায় যে নীলা পাথর সবার সয় না। একবার ভাবুন তো জিনি কোন দিন রত্ন পাথর কি সেটাই জানেন না তিনিও নীলা সম্পর্কে এমন ধারণা পোষণ করেন।
সাধারণ মানুষের কথা যদি বাদ দিয়ে কোন জ্যোতিষের কাছে যাই তার পরামর্শ নিয়ে রত্ন পাথর ব্যবহার করার জন্য। দেখবেন তিনিও বলছেন, না বুঝে নীলা পাথর ব্যবহার করা ঠিক নয়। কারন এটা সবার সহ্য হয়না। এহেন পরিস্থিতিতে “নীলা সবার সয় না” এ কথা শোনেন নাই এমন মানুষ পাওয়া খুব কষ্ট। এমনকি কথাটি দিনের পর দিন নানান জনের কাছে থেকে শুনতে শুনতে এক পর্যায় আমরা সাধারন মানুষ গুলো নিজেদের অগোচরে কথাটি একরকম বিশ্বাস করে ফেলেছি। বিশ্বাস না করলেও নীলা পাথর ব্যবহারের সময় ভেতরে ভেতরে কেমন যেন একটু দুশ্চিন্তা গ্রস্থ হয়ে পরি আমরা। এমন এক পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে যদি এক কথায় বলতে হয় তাহলে বলছি এমন কথার কোন বাস্তব ভিত্তি নেই।
এবার নিশ্চয়ই আপনাদের কপাল কিছুটা কুঁচকে গেল। মনে মনে ভাবছেন “Rashi Ratno (রাশিরত্ন)” প্রতিষ্ঠানের নিশ্চয়ই মাথা খারাপ। আদতে আমাদের প্রতিষ্ঠান বরাবরের মতই রত্ন পাথর এবং জ্যোতিষ শাস্ত্র নিয়ে মিথ্যা এবং ভুল ধারনা গুলো ভেঙ্গে দিতে চেষ্টা করে মাত্র। আমাদের একটাই লক্ষ্য, আপনারা সঠিক তথ্য জেনে গ্যারান্টি সহ সঠিক রাশিরত্ন পাথরটি ক্রয় করবেন এবং ব্যবহার করবেন। আর উপকার? সে তো মহান আল্লাহ্র ইচ্ছা। তিনি চাইলেই শুধু মাত্র উপকার পাওয়া যাবে। সঠিক তথ্যটুকু জানার ফলে আপনারা যে প্রতারনার হাত থেকে বেঁচে যাবেন। তাতেই আমাদের সার্থকতা। তাহলে আসুন সঠিক তথ্য টুকু যেনে নেই…………
আপনি যখন কোন জ্যোতিষের কাছে যাবেন তার পরামর্শ নেবার জন্য তখন একটি বিষয় লক্ষ্য করবেন যে তিনি আপনাকে নানান ধরনের নেগেটিভ কথা বলবেন পাথর সম্পর্কে। না জেনে না মেনে পাথর ব্যবহার করলে আপনি ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। কিন্তু যখনই আপনি পাথরের উপকার পাওয়ার বিষয় নিয়ে জিজ্ঞাসা করবেন তখন দেখবেন যে তিনি তার কোন শক্ত আশ্বাস দিতে পারবেন না এমন কি প্রায়শই বলে থাকেন আল্লাহ্ চাইলে উপকার পাবেন। তাহলে অপকারের কথায় তারা এত জোর দেন কি করে যখন উপকারের কথায় শক্ত কোন জোর দিতে পারেন না। এর একটাই কারণ আর তা হল আপনাকে ভয়ের মধ্যে রেখে দেওয়া। অথবা আপনার পাশের যে মানুষটি বলেছিল, না জেনে পাথর ব্যবহার করলে ক্ষতি হয়, তাকে জিজ্ঞেস করে দেখুন হয়তো তিনি সারা জীবনে কোন পাথর কেনা তো দূরের কথা কোন প্রকারের পাথর দেখেনও নাই। কিন্তু কি আশ্চর্য দেখুন, তিনিও কারো কাছ থেকে শুনে আপনাকে এ কথা গুলো বলেছেন। যেখানে রত্ন পাথরের উপকারের কথা গ্যারান্টি দিয়ে কেও বলতে পারেনা সেখানে ক্ষতির কথা বলে ভয় দেখানোর কোন যুক্তি থাকতে পারেনা।
তাহলে এমন কথা ছড়ানোর কারন কি? প্রথমে বলছি ব্যবসায়িক দিক থেকে, আপনি হয়তো জানেন না যে, কোয়ালিটির উপর নির্ভর করে একটি নীলা পাথরের মূল্য যেমন ৪০০০ টাকা হতে পারে আবার সেটা ৪ লক্ষ টাকাও হতে পারে। একটি ভালো মানের নীলা পাথর কিনতে গেলে দের থেকে দুই লক্ষ টাকা লেগে যেতে পারে। কিন্তু আপনার বাজেট এর থেকে অনেক অনেক কম। আবার আপনার বাজেটে হয়তো যে নীলা পাথর পাবেন সেটা দেখতে পছন্দ হবার মত নয়। তখন কিছু কিছু মানুষ তাদের ক্লায়েন্টের কাছে অন্তত একটি পাথর বিক্রির উদ্দেশ্যে বলে থাকেন যে, নীলা সবার সয় না তাই এর পরিবর্তে পদ্মনীলা পাথর (Amethyst Stone) ব্যবহার করুন। ফলে পাথরও বিক্রি হল এবং নীলার সমস্যাও সমাধান হল। মাঝের উপর ছড়িয়ে পরল নীলা তো সবার সয় না এমন একটি মিথ্যা কথা।
এ কথাটি প্রতিষ্ঠিত করতে মানুষের মনস্তাত্ত্বিক দুর্বলতাকে কাজে লাগানো হয়ে থাকে। যখন কেও দেখছেন যে তার ক্লায়েন্টের কাছে অতিরিক্ত মূল্যর কারনে একটি নীলা পাথর বিক্রি করতে পারছেন না, আবার কম দামের নীলা পাথরটিও ক্লায়েন্টের পছন্দ হচ্ছে না, তখন তিনি খুব সহজে তার মনে মধ্যে ভয়ের একটি বীজ বুনে দেন। নীলা ব্যবহারে সহ্য না হলে ক্ষতি হতে পারে। তখন মনের দুর্বলতার জন্য আপনি নিজেই হোঁচট খাবেন আর দোষ দেবেন নীলার উপর। অনেকে নীলা বিক্রির আগে বলে থাকেন নীলা ব্যবহারের পূর্বে সেটা ঘুমানোর সময় বালিশের নিচে রেখে সাত দিন ঘুমাবেন, যদি এই সাত দিনের মধ্যে কোন খারাপ স্বপ্ন দেখেন তাহলে নীলা ব্যবহার করবেন না। এখন যদি ধরেন আগামি কাল আপনার পরীক্ষা। পরীক্ষার আগের রাতে আপনি স্বপ্ন দেখলে বেশীর ভাগ সময় স্বপ্নে দেখবেন হয়তো পরীক্ষার হলে কলম দিয়ে কালি বেড় হচ্ছেনা, অথবা রাস্তা ভুল করে ফেলেছেন, অথবা সময় শেষ কিন্তু খাতায় কিছুই লেখা হয়নি। এটাই স্বাভাবিক। এটাকে আমরা অবচেতন মন বলে থাকি। নীলা পাথর বালিশের নিচে রেখে দুঃস্বপ্নের জন্য অপেক্ষা করলে দুঃস্বপ্ন দেখবেন না তা কি হতে পারে? আপনি দুঃস্বপ্নই দেখবেন।
সারা পৃথিবীতে প্রায় ৬০০ কোটি মানুষ রয়েছে। আর রত্ন পাথর মানুষ ব্যবহার করে হাজার হাজার বছর ধরে। খুব বেশী দূরে না তাকালেও আমরা দেখতে পাই কয়েক শ বছর আগের রাজা বাদশারা সকল প্রকারের দামী রত্ন পাথর গুলো ব্যবহার করতেন। আর বর্তমান যুগের পৃথিবী জুড়ে যত ধনী রয়েছেন তারা ব্যবহার করেন পৃথিবীর সকল দামী রত্ন পাথর গুলো। আর এদের মধ্যে কেহই জ্যোতিষ দেখিয়ে পাথর ব্যবহার করেন না। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় ইংল্যান্ডের রানীর কাছে রয়েছে পৃথিবীর দামী দামী রত্ন পাথর গুলো। যার মধ্যে কোহিনূর হীরাও রয়েছে। এখন পৃথিবীর ধনীরা জ্যোতিষ না দেখিয়ে পাথর ব্যবহার করলে কোন ক্ষতি হয় না, যা ক্ষতি হয় আমাদের মত সাধারণ মানুষ জ্যোতিষের কাছে গিয়ে রত্ন পাথর ব্যবহার করতে গেলে। বিষয়টা কেমন যেন হয়ে গেল না?
এ ধরনের কথা গুলো সাধারনত সে মানুষ গুলো বিশ্বাস করে যারা মনে করেন রত্ন পাথর ব্যবহার করলেই মানুষের উপকার হয় অথবা তার নিজের উপকার হবেই। আদতে রত্ন পাথর কখন কাকে কতটা উপকার দেবে এমনটাই তো কেও গ্যারান্টি দিয়ে বলে দিতে পারেন না। তাই ক্ষতির কথা ভেবে নিজেকে আরও দুর্বল করার কোন যুক্তি নেই। যে মানুষ মনের দিক থেকে সাহসী রত্ন পাথর শুধু মাত্র তাদেরই উপকারে আসে। কোন ভিতুর জন্য নয়। কারন ভিতু মানুষ তো নিজেই ভয় পেয়ে শুকনো জাগায় হোঁচট খায়। তাকে রত্ন পাথর কি ক্ষতি করবে বা উপকার করবে। মনে রাখা উচিৎ যে এ পৃথিবীতে শুধু মাত্রই সাহসী মানুষের জয় হয়। আপনি মনের দিক থেকে দুর্বল হলে নকল একটি কাচের তৈরি পাথরও আপনার ক্ষতি করবে। অন্য ভাবে বলতে গেলে বলা যায় স্বয়ং আল্লাহ্তালা পবিত্র কোরআন শরীফের তার ক্ষমতার কথা বলতে গিয়ে সূরা “আর-রহমান” এ রত্ন পাথরের কথা নেয়ামত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাই আমাদের বিশ্বাস আল্লাহ্র নেয়ামত মানুষের উপকার না করলেও অন্তত কোন ক্ষতি করতে পারেনা। সব শেষে বলতে পারি যে কিছুটা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে এমন একটি কথা ছড়ানো হয়েছে আর এ কথা গুলো ভিত্তি পেয়েছে কিছু দুর্বল চিত্তের মানুষের কারনে। যারা নিজেরা দুর্বল হয়ে হোঁচট খেয়ে দোষ দিয়ে থাকেন রত্ন পাথরের উপর। তাই নীলা সবার সয় না এমন কথা সঠিক না ভুল তার বিচার আপনার হাতেই ছেড়ে দিলাম।