Skip to content

রত্নপাথর কি এবং পাথর কি জীবিত বা মৃত হয় অথবা হাঁটে চলে, দুধ খায়?

রাশি রত্ন পাথর কে ইংরেজিতে (Astrological Gemstone / Gemstone) বলা হয়। আদিকাল থেকেই রত্নপাথর নিয়ে নানান জনের মনে নানার প্রশ্ন আর এ ধরনের অদ্ভুত অদ্ভুত প্রশ্ন আবার সৃষ্টি করে দিয়েছে কিছু অসাধু মানুষ। এই রাশি রত্ন পাথর বা Gemstone মাটির নিচে জমাট বাধা ভিন্ন ভিন্ন ক্যামিকেলের ছোট ছোট টুকরা ছাড়া আর কিছু না। পৃথিবী সৃষ্টির সময় থেকে নানা রকম পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে আগ্নেয়গিরি সহ নানান কিছুর কারনে মাটির নিচের তাপমাত্রা অনেক অনেক বেশী ছিল। সেই তাপের ফলে মাটির নিচে বিভিন্ন ক্যামিকেল বাস্প হয়ে মাটির উপরে বেড় হয়ে আসার পথে যখন কোথাও আটকে যায় তখন তাপের ফলে সৃষ্ট চাপে সেই ক্যামিকেল গুলোই মাটির নিচেই জমাট বেধে যায় আর নানান রকম পাথরের ক্রিস্টাল তৈরি হয়। আর এ জমাট বাধা পাথরের ছোট ছোট ক্রিস্টালকে মাটির নিচ থেকে উত্তোলন করে মেশিনের সাহায্যে কাটিং করে সুন্দর সুন্দর পাথরের রূপ দেওয়া হয়। ক্যামিকেলের ভিন্নতার কারনে এক একটি রাশি রত্ন পাথর এক এক রকম দেখতে হয়ে থাকে। যেমন আমরা সবাই জানি কয়লার খনিতে হীরা পাওয়া যায়। কেন পাওয়া যায় সেটা কি ভেবে দেখেছি? আসলে কয়লার ক্যামিকেল হচ্ছে কার্বন, আর এই কার্বনের এক রূপ হচ্ছে গ্রাফাইট যা আমাদের লেখার পেন্সিলে ব্যবহার করা শিস। হীরাও হচ্ছে কার্বনের আরেক রূপ। ঠিক এভাবে প্রতিটা আলাদা আলাদা রাশি রত্ন পাথরের ক্যামিকেলও আলাদা। তাই মনে রাখা উচিৎ যে রাশি রত্ন পাথর অলৌকিক ভাবে পাওয়া কোন জিনিস নয়।

যেহেতু রাশি রত্ন পাথর জমাট বাধা ক্যামিকেল এর ছোট ছোট টুকরা ছাড়া আর কিছু নয় তাই এর জীবন থাকার কোন প্রশ্নই আসেনা। সমুদ্রের পানি শুকিয়ে যেমন লবন পাওয়া যায় এবং সেই জমাট বাঁধা লবনের কোন প্রাণ থাকেনা, ঠিক সেভাবেই রত্নপাথরের কোন প্রাণ নেই। আমাদের চারপাশে রাস্তা বানাতে যে পাথর গুলো ব্যবহার করা হয়, ঠিক এমন পাথরের মাঝেই থাকে নানান রঙ বে রঙের রত্ন পাথর। যে পাথর গুলো রত্ন পাথরের মত দেখতে সুন্দর নয়, যে পাথর গুলো সাধারন সেগুলো দিয়ে আমরা রাস্তা বানাই, ইমারত বানাই। আর এর মাঝে থেকে যে পাথর গুলো দেখতে সুন্দর সে গুলোকেই সংগ্রহ করে কাটিং করে রত্ন পাথর হিসেবে বিক্রি করা হয়। তাই এক কথায় রাস্তা বানানোর পাথর আর রত্ন পাথর একই জিনিস। যেহেতু রাশি রত্ন পাথর হাঁটে না, কথা বলেনা, খাবার খায় না, বংশবৃদ্ধি করেনা অথবা মরে যায় না তাই রাশি রত্ন পাথর জীবিত বা মৃত হয়না। এটা হয় আসল অথবা নকল। তবে কিছু কিছু মানুষ কিছু কিছু পাথকে লেবুর রসের উপর রেখে দেখিয়ে থাকে যে পাথর হেঁটে যাচ্ছে। যেহেতু পাথর ক্যামিকেলের জমাট বাঁধা টুকরা আর লেবুর রস হচ্ছে এসিড তাই কিছু কিছু পাথর সেই এসিডের সাথে বিক্রিয়া করে। ফলে পাথরের নিচে লেবুর রস লাগার পরে সেখানে ছোট ছোট বাবোলস সৃষ্টি হয়, এ বাবোলস গুলো যখন ফেটে যায় তখন সেটার বাতাসের ধাক্কায় পাথর একটু সরে যায় আর এটাকেই অনেকে তাজা পাথর বা জীবিত পাথরের হেঁটে যাওয়া বলে থাকে। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছু নয়।

এছাড়া অনেকে আবার পাথরের দুধ খাওয়ার কথা বলে থাকে। এ বিষয়ে কথা বলার আগে আপনাকে বলতে চাই, রাস্তায় পরে থাকা যে কোন একটি পাথর তুলে নিয়ে আসুন। ২-৩ ফোঁটা দুধ কোথাও রেখে তার উপর পাথরটি রাখুন। দেখবেন দুধ গায়েব হয়ে গেছে। আসলে এটা কোন অলৈকিক বিষয় নয়। পাথর দুধ শুষে নিয়েছে। এমনটা কিছু কিছু পাথরের ক্ষেত্রে হতেই পারে। তাই পাথর দুধ খাচ্ছে এবং এটি তাজা পাথর এমন সব কথা সঠিক নয়।