আপনি হয়তো যেদিন থেকে রত্ন পাথর সম্পর্কে জানেন সেদিন থেকেই আপনার মনে বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে ধারনার জন্ম নিয়েছে। মানুষ ভাগ্য বদলের জন্য রত্ন পাথর ব্যবহার করে থাকে। এমন কি যারা জ্যোতিষ শাস্ত্র নিয়ে কাজ করেন তারাও অল্প বিস্তর বলার চেষ্টা করেন যে রাশি রত্ন পাথর ব্যবহার করলে মানুষের ভাগ্য বদলায়, বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়, পরিবারে শান্তি পাওয়া যায়, কিছু কিছু সময় চাকুরী হওয়া, বিয়ে হওয়ার মত কাজও হয়ে যায়। রাশিরত্ন পাথর নিয়ে ব্যবসায় করতে এসে এমন অনেক মানুষ পেয়েছি যারা বিশ্বাস করেন রত্ন পাথর ব্যবহারের ফলে আল্লাহ্র ইচ্ছায় তাদের জীবনে পরিবর্তন এসেছে, আবার এমন অনেক মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে যারা রত্ন পাথর ক্রয় করে বছরের পর বছর ধরে ব্যবহার করে কোন প্রকারের উপকার না পেয়ে হয় একের পর এক পাথর বদলেছেন নয়তো পাথর ব্যবহার করা ছেড়ে দিয়েছেন। এর পর পাওয়া যায় এমন একদল মানুষ যারা রাশিরত্ন পাথর ব্যবহারে ভাগ্য বদল কে সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভণ্ডামি বলে আখ্যা দেন। সনাতন ধর্মে রাশিরত্ন পাথর ব্যবহার বা ভাগ্য গণনা অনুমোদন করলেও ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী ভাগ্য গণনা করা বা পাথরের ভাগ্য বদলানোর ক্ষমতাকে বিশ্বাস করলে সেটা গুনাহ হিসেবে ধার্য।
তাহলে প্রশ্ন চলেই আসে যে পাথর ব্যবহার করলে আসলেই কি কিছু হয়? অথবা ইসলাম ধর্মে কি পাথর ব্যবহার করা সম্পূর্ণ নিষেধ?
এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে সবার আগে আমাদের জানা উচিৎ রাশিরত্ন পাথর সম্পর্কে, যাকে ইংরেজিতে Gemstone বলা হয় তা আসলে কি এবং কোথা থেকে এল। প্রকৃত পক্ষে প্রতিটা আলাদা আলাদা পাথর আলাদা আলাদা ক্যামিকেলের জমাট বাঁধা টুকরা ছাড়া আর কিছুই না। যে ক্যামিকেল গুলো পৃথিবী সৃষ্টির সময় মাটির নিচের গরম লাভার থেকে বাষ্প আঁকারে উৎপন্ন হয়ে মাটির নিচ থেকে বের হয়ে যাবার সময়ে কোন জায়গায় আটকে যাওয়ার ফলে উপরের মাটির চাপ এবং নিচের প্রচণ্ড তাপের কারনে একসময় জমাট বেঁধে পাথরের আকার ধারণ করে। ক্যামিকেলের জমাট বাঁধা সেই পাথর গুলোই মানুষ শতশত বছর ধরে মাটির নিচ থেকে উত্তোলন করে কাটিং ও পলিশিং এর মাধ্যমে সুন্দর রত্নপাথরের রূপ দিয়ে থাকে।
আমরা জানি মানুষের শরীরে বিভিন্ন কেমিক্যাল বিভিন্ন ভাবে প্রভাব ফেলে থাকে। যেমন ধরুন প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেলে মানুষের শরীরের তাপমাত্রা কমতে পারে। যেমন মরিচ থেকে ঝাল আর চিনি খেলে মিষ্টি স্বাদ পাওয়া যায়। ঠিক সেই ভাবে আলাদা আলাদা পাথরের ক্যামিকেল মানুষের শরীর ও মনে প্রভাব ফেলে থাকে। এছাড়া পাথর মনস্তাত্ত্বিক ভাবেও মানুষের মনে প্রভাব ফেলে। যেমন ধরুন কোন অসুস্থ মানুষ যখন ডাক্তারের কাছে যান তখন তিনি অগের থেকে অনেক বেশী সুস্থ বোধ করেন। কারন তখন তার মনে একটু পজিটিভ শক্তির জন্ম নেয় যে তিনি এবার সুস্থ হবেন। ফলশ্রুতিতে মনের জোর বেড়ে যায় বহুগুণ। এভাবে যখন কোন মানুষ বিপদের সময় আল্লাহ্র উপর ভরসা করে কোন রত্ন পাথর ব্যবহার করে তখন ভালো হবার আশায় মনের জোর বেড়ে যায়। ফলে আগের থেকে অনেক বেশী শক্তিতে কাজ করতে পারেন। যা তাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। অনেক ক্ষেত্রেই আগের থেকে বেশী সফলতা পাওয়া যায়। কারন মহান আল্লাহ্তালা তাকেই সাহায্য করেন যে নিজে কাজ করার চেষ্টা করেন। রাশি রত্ন পাথর হাতে দিয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে উপকারের থেকে অপকারই বেশী।
আবার ইসলাম ধর্মের দিক থেকে দেখতে গেলে বলা যায় এখানে স্পষ্ট ভাগেই জ্যোতিষীর কাছে যেয়ে ভাগ্য গণনা করা হারাম করে দেওয়া হয়েছে। পাথর ভাগ্য বদলে দেবে এমন কথায় বিশ্বাস করা যেমন হারাম অন্যদিকে বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু ইসলাম ধর্মে যে রত্ন পাথরকে খারাপ ভাবে দেখা হয়েছে বা কোন গুরুত্ব দেয়নি সেটাও বলা যাবে না। রত্ন পাথর যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তা আবার জানা যায় পবিত্র কোরআন শরীফের মাদ্ধমেই। সূরা আর-রহমানে মহান আল্লাহ্ তার ক্ষমতা বুঝাতে প্রবাল, মুক্তা ও রুবি পাথরের কথা তার নেয়ামত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। মহান আল্লাহ্ যেখানে স্পষ্ট ভাবে রত্ন পাথরের নাম উল্লেখ করে তার নেয়ামত হিসেবে উল্লেখ করেছেন সেখানে ইসলাম ধর্মে এই রত্ন পাথরকে খারাপ ভাবে বলা উচিৎ নয় বলেই আমার বিশ্বাস। কিন্তু কোথাও এটা বলা নেই যে রাশিরত্ন পাথর ব্যবহার করলে মানুষের ভাগ্য বদলে যাবে। ভাগ্য বদলের ক্ষমতা একমাত্র মহান আল্লাহর। তাই বলা যায় রত্ন পাথর সরাসরি মানুষের ভাগ্য বদলায় না।
এখানে আল্লাহ্র উপর ভরসা, আসল রাশি রত্ন পাথর ব্যবহার এবং আগের থেকে বেশী কাজ, এই তিনের সমন্বয়েই মানুষের ভাগ্য বদলায়। এর সাথে যোগ হয় সাহসী মানুষের মনের শক্তি। শুধু দোয়া করলে অসুখ ভালো হয়না, শুধু ওষুধ খেলেও অসুখ ভালো হয় না। দোয়া এবং দাওয়া দুটিই প্রয়োজন সুস্থ থাকার জন্য। মানুষ অসুস্থ হলে চিকিৎসা গ্রহন করবে, আল্লাহর নাম নিয়ে ওষুধ গ্রহন করবে এবং উপকারের আশায় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবে, এটা যেমন জায়েজ ঠিক সে ভাবেই মানুষ জীবনে ভালো থাকার জন্য আল্লাহর বলা নেয়ামত রত্ন পাথর ব্যবহার করবে এবং উপকারের আশায় তার কাছে সাহায্য চাইবে সেটাও জায়েজ। মানুষ যদি জ্বরের মধ্যে ওষুধ খেয়ে মনে করেন ঐ ওষুধ তার জ্বর ভালো করে দেবেন তাহলে যেমন ওষুধকে ক্ষমতা দেবার কারনে গুনাহ করবেন তেমনি রাশিরত্ন পাথর ব্যবহারের সময় যদি মনে করা হয় এই পাথরই কিছু করে দেবে তাহলেও গুনাহ। দুই ক্ষেত্রেই উপকার পাওয়ার জন্য আল্লাহ্র কাছে সাহায্য চাইতে হবে। এখানে কোন প্রকারের অলৌকিক বিষয় নেই। তাই রত্ন পাথর ব্যবহার করলে সরাসরি মানুষের ভাগ্য বদলায় না। রত্ন পাথরের ভাগ্য বদলানোর কোন ক্ষমতা নেই। সকল ক্ষমতা আল্লাহ্র। তিনি চাইলে তার নেয়ামতের উছিলায় মানুষের উপকার হয়ে থাকে।