Skip to content

History of Koh-i-Noor Diamond (কোহিনূর হীরার জীবন কাহিনী)

“কোহ-ই-নূর” বা “কোহিনূর” নামটি শোনেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যে দুস্কর সেটা আমার সাথে আপনারা সবাই একমত হবেন বলেই বিশ্বাস। এই একটি নামের সাথে যে কত ইতিহাস জড়িত তা আমাদের অনেকের অজানা। কোথা থেকে এসেছে, কিভাবে এসেছে, কার কার হাট দিয়ে এখনই বা কোথায় রয়েছে। এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর চলুন আজ যেনে নেই।

মুঘল সাম্রাজ্যের ২য় সম্রাট হুমায়ূন বহু দূর থেকে ঘোড়া ছুটিয়ে এসে প্রবেশ করেন তার পিতা সম্রাট বাবরের তাবুতে। এর পর পরম যত্নের সাথে পিতার হাতে তুলে দেন একটি হীরক পাথর। যে হীরকটি পাওয়া গিয়েছিল ভারতের গোলকুণ্ডার হীরার খনি থেকে। যে হীরাটি সম্পর্কে বলতে গিয়ে সে সময়ের এক রত্নাকর বলেছিলেন যে, সারা পৃথিবীর আধা বেলার খরচ নির্বাহ করা যাবে এ হীরার মূল্য দিয়ে। এই হীরক পাথরটির নামই হচ্ছে “কোহ-ই-নূর”।

মোঘল বাহিনীর হাতে পরাজিত হন গোয়ালিয়রের শাসক। সেই শাসকের মাতা অপেক্ষায় থাকেন ছেলের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সুসম্পন্ন করার জন্য। কিন্তু তাঁর তাবুতে আক্রমন করেন ডাকাতের দল। ডাকাতের হাত থেকে তাদের উদ্ধার করেন শাহজাদা হুমায়ূন। কৃতজ্ঞতা স্বরূপ সেই মহিলা হুমায়ুনের হাতে তুলে দেন কোহিনুর হীরা।

১০৫.৬ ক্যারেটের এই হীরার ইতিহাস কিন্তু বহু আগের। নানা ঘটনা জড়িত রয়েছে এর সাথে। কারো মতে এই হীরার বয়স ৫ হাজার বছর। কারো মতে কর্ণাটকের কোলার খনি থেকে কেউ বা বলে গোয়ালিয়রের খনি থেকে এসেছে কোহিনুর। হিন্দু মিথলোজিতে আছে এই হীরাটার কথা। চন্দ্র গুপ্ত মৌর্যের হাতেও এসেছিল এই হীরাটা এইরকম শোনা যায়। কিন্তু শক্ত কোনও ভিত্তি নেই এই কথাগুলোর।

যাই হোক ইতিহাসবিদদের মতে ১৩০৬ খ্রিষ্টাব্দে মালওয়ার শাসক কাকাতিয়া সাম্রাজ্যের শাসকের হাতে তুলে দেন কোহিনুর কে। কাকাতিয়া সাম্রাজ্যের হাত থেকে এই হীরা আসে দিল্লীর পাগলা সুলতান বলে খ্যাত মুহম্মদ বিন তুঘলকের হাতে সম্ভবত ১৩২৩ খ্রিষ্টাব্দে। পরে লোদী সাম্রাজ্যের শাসকরা এটার মালিক হবার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন।

সম্রাট বাবরের লিখিত বাবর নামাহর মতে গোয়ালিয়রের সেই নাম না জানা রাজপরিবারের হাত থেকে তারা কোহিনুর হীরাটি পান। প্রসঙ্গত সেই রাজপরিবার আর ইব্রাহিম লোদি এক সাথে লড়েছিলেন পানিপথের প্রথম যুদ্ধে। সম্রাট বাবরের হাত ধরে সেই হীরা আসে সম্রাট হুমায়ূনের হাতে। ইতিহাসবিদেররা বাবর নামা কে শক্তিশালী রেফারেন্স হিসেবে গন্য করেন।

আবার হাতবদলঃ

সম্রাট হুমায়ূন রাজ্যহারা। আশ্রয় নিয়েছেন পারস্যের অধিপতি শাহ তামাস্পের কাছে। কৃতজ্ঞতার নিদর্শন হিসেবে কিংবা উপহার বিনিময়ের রেওয়াজ হিসেবে পারস্যের সম্রাটের হাতে তুলে দেন এই মহামূল্যবান হীরাটি। পরবর্তীতে পারস্যের শাহর সহযোগিতায় দিল্লীর মনসদ ফিরে পান হুমায়ূন। কিন্তু মোঘল সম্রাটদের হাতছাড়া হয়ে যায় কোহিনূর। সম্রাট আকবর দ্য গ্রেট এবং তাঁর পুত্র সম্রাট জাহাঙ্গীরের সাম্রাজ্যের সময় এই হীরা তাদের কাছে ছিল না।

ফিরে আসা মুঘলদের কাছেঃ 

পারস্যের শাহ আহমেদনগরের শাসক বুরহান নিজাম শাহ কে উপহার হিসেবে দেন কোহিনুর। মূলত নিজাম শাহ শিয়া ছিলেন বলেই এই উপহার দেওয়া। প্রায় ১০৯ বছর এই হীরা ছিল আহমেদনগরের নিজাম শাহ এবং গোলকুন্ডার কুতুব শাহ দের কাছে। পরে সুলতান আবদুলা কুতুব শাহের প্রধানমন্ত্রী মির জুমলা এই হীরা সম্রাট শাহজাহানের হাতে তুলে দেন। শাহজাহান এই হীরাটা কে বসান তাঁর বিখ্যাত ময়ূর সিংহাসনে। সম্রাট শাহজাহান পর সম্রাট আওরঙ্গজেবের কাছে ছিল এই হীরা। এই সময় কোহিনুরের স্থান ছিল মুঘল কোষাগারে। পরে মুহম্মদ শাহ রঙ্গিলার কাছে ছিল এই হীরাটা। ( উইকির মতে আওরঙ্গজেব তাঁর রাজধানী লাহোরে নিয়ে আসেন, কোহিনুর হীরার স্থান হয় তাঁর নিজ হাতে গড়া লাহোরের বাদশাহি মসজিদে)

অতঃপর হাত ছাড়াঃ

পারস্যের নাদির শাহ ভারত আক্রমন করে লুঠ করে নেন ময়ূর সিংহাসন সহ এই কোহিনুর হীরা। কিন্তু বেশিদিন ভাগ্যে সইল না তাঁর। আততায়ীদের হাতে খুন হয়ে যান নাদির শাহ। হীরা চলে যায় নাদির শাহ্‌র আফগান জেনারেল আহমেদ শাহ দুররানীর কাছে। নাদির শাহর লাশ দেখার সময় কায়দা করে তাঁর সিল টা আহত করের দুররানী এবং সেই সূত্রে মালিক হন কোহিনুরের। তাঁর মৃত্যুর পর হীরা আসে তাঁর সন্তান তিমুর শাহর কাছে। তিমুরের কাছ হতে জামান শাহর হাতে আসে সেখান থেকে সেখান হতে সুজা উল মূলকের কাছে। তিমুর শাহর ছোট সুজা উল মূলক তাঁর সৎ ভাই মাহমুদের কাছে পরাজিত হয়ে কাশ্মীরের গভর্নর আতা মুহাম্মদ খানের কাছে বন্দী হন ১৮১১ সালে। কিন্তু পাঞ্জাবের শিখ রাজা মহারাজ রঞ্জিত সিং সুজা কে উদ্ধার করেন এবং তাকে পরিবার সমেত লাহোরে পাঠিয়ে দেন। বদলে সুজা উল মূলক ১৮১৩ সালে রঞ্জিত সিং এর হাতে তুলে দেন কোহিনুর হীরা।

পাঞ্জাব থেকে ইংরেজদের হাতেঃ 

রঞ্জিত সিং মারা গেলে হীরার মালিক হন তাঁর ১১ বছরের ছেলে মহারাজ দিলীপ। কিন্তু ১৮৪৯ সালে ব্রিটিশরা দখল করে নেয় পাঞ্জাব আর বলা চলে দিলীপের হাত থেকে কেড়ে নেয় কোহিনুর হীরাটি। এইভাবে এই উপমহাদেশের কাছ হতে হাতছাড়া হয়ে যায় তাদের অন্যতম মহামূল্যবান সম্পদটি। লর্ড ডালহৌসি ১৮৫০ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পক্ষ থেকে মহারানী ভিক্টোরিয়ার হাতে তুলে দেন হীরাটি। এই আনুষ্ঠিকতা সম্পন্ন করার জন্য তাঁরা দিলীপ কে নিয়ে যান লন্ডনে। সেই থেকে কোহিনুর শোভা পাচ্ছে রানীর মুকুটে। টাওয়ার অফ লন্ডনে দেখানোর জন্য মুকুটটি রয়েছে।

কোহিনূরের মূল্যঃ

১৯৩৭ সালে আরও ২৮০০ টি হীরার সাথে কোহিনূর হীরাটি ব্রিটিশ রাজ মুকুটে যুক্ত করা হয়। বর্তমানে লন্ডন টাওয়ারে জনসাধারণের সামনে প্রদর্শনীর জন্য অন্যান্য বিখ্যাত হীরা ও রত্ন পাথরের সাথে কোহিনূর হীরাটি রাখা আছে।

কোহিনূর হীরা কি মূল্য হতে পারে তার সঠিক কোন হিসেব দেওয়া আদও সম্ভব নয়। এর একটি বড় কারন হচ্ছে কোহিনূর হীরা তার জীবনে কখনো বিক্রি হয়নি। কখনো উপহার দেওয়া হয়েছে, কখনো বা কেও চুরি করে নিয়ে গিয়েছে। তারপরেও আমরা কিছু ধারনার জন্য পাশাপাশি অন্য বিখ্যাত হীরার সাথে তুলনা করে দেখতে পারি মাত্র। গ্রাফপিংক হীরা (Graff Pink) যার ওজন ২৫ ক্যারেট এর কম, যা কোহিনূর হীরার ৪ ভাগের এ ভাগ। প্রায় ৬০ বছর আগে হংকং শহরে এ হীরাটি বিক্রি হয়েছিল ৪৬ মিলিয়ন ডলারে। ৫০ বছর পুরবেও কোহিনূর হীরার আনুমানিক মূল্য ২০০ মিলিয়ন ডলার ধারনা করা হচ্ছিল। যদিও ব্রিটিশ রাজ পরিবার কোহিনূর হীরার মূল্য ১০ থেকে ১২.৭০ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করেছে। আর এ কোহিনূর এখন ২৮০০ হীরার একটু নাম। যার প্রকৃত পক্ষেই কোন মূল্য নির্ধারণ করা সম্ভব নয়।

এ লেখাটি সংশোধিত আকারে প্রকাশ করার পূর্বে সংগ্রহ করা হয়েছে Website এবং Blog থেকে।